মঙ্গলবার, ২৬ আগষ্ট ২০২৫,

বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিক বিমান নির্মাণের কারিগর চট্টগ্রামের মেয়ে দেবযানী ঘোষ

বাংলাদেশের গর্ব দেবযানী ঘোষ! তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রথম কার্বন নিঃসরণমুক্ত বৈদ্যুতিক বিমান HY-4-এর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার মূল কারিগর।

২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বের বেসামরিক বিমান চলাচল ইতিহাসেও একটি অনন্য দিন। জার্মানির স্টুটগার্ট বিমানবন্দরে চার আসনের যাত্রীবাহী বিমান এইচওয়াই-৪ সফলভাবে সেদিন উড়াল দেয়। এটি হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিমান। চলবে জ্বালানি কোষ ও ব্যাটারির সাহায্যে। আর এই ‘এইচওয়াই-৪’ উড়োজাহাজ নির্মাণের একজন কারিগরি হলেন চট্টগ্রামের মেয়ে দেবযানী ঘোষ।

 

এছাড়া কার্বন নিঃসরণমুক্ত এই উড়োজাহাজ তৈরির বৈজ্ঞানিক অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার (ডিএলআর)। গবেষণার প্রধান অংশীদার ইউনিভার্সিটি অব উলম। এই ইউনিভার্সিটি অব উলমের গবেষণা দলে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন দেবযানী ঘোষ।

 

দেবযানীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরেই। ১৯৮৮ সালে ৩০ অক্টোবর জন্ম। তিনি অপর্ণাচরণ উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বেরিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলে স্নাতক হওয়ার পর দেবযানী কিছুদিন শিক্ষকতা করেন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে। এরপর চলে যান জার্মানি। পিএইচডি করেছেন ইউনিভার্সিটি অব উলম থেকে। আরডাব্লিউটিএইচ আচেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্ষমতা প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে।

 

৪ আসনের এইচওয়াই-৪ হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিমান। যেটি চলে জ্বালানি কোষ ও ব্যাটারির সাহায্যে। এই বিমানের শব্দও কম। ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জার্মানির স্টুটগার্ট বিমানবন্দর থেকে সেটি সফলভাবে উড্ডয়ন করে।

 

প্রথম থেকেই তার উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে কাজ করা। তাই আরডাব্লিউটিএইচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর তিনি এইচওয়াই-৪ প্রকল্পের গবেষণা দলে যোগ দেন।

 

এইচওয়াই-৪ বিমানের বিদ্যুৎশক্তির ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ দেবযানীর। তিনি জানান, ‘ফুয়েল সেল এবং ব্যাটারির ডিসি বিদ্যুৎকে এসিতে রূপান্তর করার জন্য একটা সম্পূর্ণ নতুন সিলিকন কার্বাইডের পাওয়ার ইলেকট্রনিকস আর্কিটেকচার তৈরি করা হলো আমার কাজ।’

 

আর এটা এমনভাবে বানাতে হবে, যা একই সঙ্গে ভালো কাজ দেবে, ওজনে হালকা ও বিশ্বস্ত হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্রাংশ এবং পাওয়ার ইলেকট্রনিকসের মধ্যে একটা ইন্টারফেস তৈরি করেন দেবযানী। এটি বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কৌশল এবং ব্যাটারির চার্জিং-ডিসচার্জিং অনুযায়ী শক্তির প্রবাহ বদলে দিতে পারে।

 

বাংলাদেশের কত ট্যালেন্ট পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অথচ তাদের সেই মেধাগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে দেশে ব্যবহার করতে পারতাম, তাহলে এতদিনে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি চলে যেত।