
মার্ক জাকারবার্গের এআই-ভবিষ্যত দর্শন:
মার্ক জাকারবার্গের এআই-ভবিষ্যত দর্শন: বন্ধু, থেরাপিস্ট এবং ডিজিটাল সহচর হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
মেটা প্ল্যাটফর্মসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যতের এক নতুন রূপরেখা তুলে ধরেছেন—যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কেবল প্রযুক্তিগত সহায়ক নয়, বরং মানুষের নিত্যদিনের সম্পর্ক, থেরাপি, ব্যবসায়িক কার্যক্রম এমনকি মানসিক সঙ্গী হিসেবেও ভূমিকা পালন করবে। জাকারবার্গের মতে, মানুষ সামাজিক জীব এবং প্রতিনিয়তই আরও বেশি সম্পর্কের খোঁজে থাকে—যা বাস্তব জগতে সবসময় সম্ভব হয় না। সেখানেই জায়গা করে নিচ্ছে ‘ব্যক্তিগত এআই এজেন্ট’। এই এআই সিস্টেমগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যেন তারা মানুষের বন্ধু, থেরাপিস্ট, সহচর বা ব্যবসার সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
ডিজিটাল বন্ধু থেকে সহায়ক থেরাপিস্ট
মেটা ইতোমধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও রে-বেন স্মার্ট গ্লাসে এআই অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেখানে মাসিক প্রায় ১০০ কোটি ব্যবহারকারী এসব প্ল্যাটফর্মে এআই ব্যবহার করছেন। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন এক ডিজিটাল জগৎ গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে মানুষ একান্ত নিজের জন্য এআই বন্ধু বা সহচর তৈরি করতে পারবে। কেউ চাইলে নিজের জন্য এমন এক এআই তৈরি করতে পারবে, যেটি তাদের কথা শুনবে, মন খারাপের সময় সাহচর্য দেবে, এমনকি মনের জটিল কথাগুলোকেও বোঝার চেষ্টা করবে। তবে শুধু মানসিক সহায়তাই নয়—ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কাস্টমার সার্ভিস, স্বয়ংক্রিয় সহকারী, থেরাপি অ্যাপ্লিকেশন, এজেন্ট-ভিত্তিক যোগাযোগে এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও জাকারবার্গ মন্তব্য করেন।
সমালোচনার মুখে এআই-নির্ভর সম্পর্ক
মেটার এই দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ইনস্টাগ্রামের সাবেক নির্বাহী মেঘনা ধর একে তুলনা করেছেন “আগুন লাগিয়ে ফায়ারম্যান সেজে ফিরে আসা”-র সঙ্গে। তার মতে, একই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেগুলো মানুষকে একাকী করে তুলেছে, এখন তারাই আবার সেই একাকীত্ব দূর করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী স্টিফেন শুয়েলার বলেন, যারা পেশাদার থেরাপিস্টের কাছে যেতে পারেন না, তাদের জন্য কিছুটা সহায়ক হতে পারে এআই। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এআই-এর ক্ষমতা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। মানুষের আবেগ, সম্পর্ক এবং সহানুভূতির জটিলতা বোঝা এখনো এআইয়ের জন্য সহজ নয়।
বিশাল বিনিয়োগ: প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলা
সমালোচনার মধ্যেও মেটা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থেকে একচুলও সরছে না। ২০২৫ সালে মেটা ৬০ থেকে ৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার একটি বড় অংশ ব্যয় হবে এআই প্রযুক্তি এবং ডেটা সেন্টার পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে। এই ব্যয়ের রূপরেখা শুধু মেটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—আমাজন, মাইক্রোসফট এবং গুগলের মতো টেক জায়ান্টরাও এআই পরিকাঠামো ও ক্লাউড সেবা উন্নয়নে বিশাল বিনিয়োগ করছে।
মেটার নেতৃত্বে এআই-ভবিষ্যতের দিগন্ত
মার্ক জাকারবার্গ যে ভবিষ্যতের কথা বলছেন, তা কেবল প্রযুক্তিগত নয়—এটি একটি সামাজিক, মানবিক এবং নৈতিক বিতর্কও।
এআই যদি মানুষের বন্ধু হয়, তাহলে সেই বন্ধুত্ব কতটা বাস্তব? সেই সম্পর্কের দায় কে নেবে?
এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এটি কি মানুষের প্রকৃত সামাজিকতা বাড়াবে, নাকি এক নতুন একাকীত্ব তৈরি করবে?
যদিও এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়, তবুও এটুকু নিশ্চিত—মেটা তার এআই নেতৃত্বে একটি নতুন যুগের পথে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে প্রযুক্তি আর মানুষ—দুজনেই একে অপরের আরও কাছাকাছি আসবে, তবে একেবারে নতুন এক বাস্তবতায়।
আপনিও কী প্রস্তুত এমন এক ভবিষ্যতের জন্য, যেখানে আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারে একটি এআই?
তথ্যসূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল