সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫,

ছবি: যুগান্তর

চবির জাদুঘরে জুলাই আন্দোলনে প্রাণ হারানো হৃদয়ের রক্তমাখা পোশাক

জুলাই আন্দোলনে শহীদ হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাস বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও মো. ফরহাদ হোসেন। চবি জাদুঘরের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান হলে’ সংরক্ষিত হয়েছে এ দুই শহীদের বেশ কিছু স্মৃতিচিহ্ন।  

হৃদয় তরুয়া যে শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেই রক্তমাথা পোশাকগুলো সংরক্ষিত রয়েছে এ হলে। তবে, কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে ফরহাদ হোসেনের রক্তামাখা কাপড় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

জাদুঘরের জুলাই গণঅভ্যুত্থান হল ঘুরে দেখা যায়, একটি শোকেসের মধ্যে হৃদয় তরুয়ার রক্তমাথা শার্ট ও প্যান্ট সংরক্ষণ করা হয়েছে। শার্টে রক্ত লেগে থাকায় তা শুকিয়ে লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। কলার ও সামনের কিছু অংশ ছেঁড়া অবস্থায় আছে।

পাশের আরেকটি শোকেসে ফরহাদ হোসেনের ব্যবহৃত টি-শার্ট, ডায়েরি, হাতে লেখা নোট ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া মাথায় পরিহিত পতাকা সংরক্ষিত আছে। দুই শহীদের একাডেমিক বিভিন্ন নথিও রয়েছে এ সংগ্রাহশালায়। এছাড়া আন্দোলনে আহত ও নিহতদের একটি তালিকাও সংরক্ষণ করা হয়েছে এ হলটিতে।

তরুয়ার রক্তমাখা শার্ট যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জাদুঘরের পরিচালক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

 

গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে উদ্বোধন করা হয় হলটি। একই মাসের মাঝামাঝি সময় শহীদদের এসব স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

পরিচালক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এ জনপদে জুলুম আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তির জন্য যত সংগ্রাম হয়েছে, প্রামাণ্য দলিলের অভাবে সে সকল ঐতিহাসিক ঘটনার নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনায় বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাতেও একই অবস্থা তৈরি হয়। তাই আমরা এ জুলাই অভ্যুত্থানকে ডকুমেন্টেশনের জায়গা থেকে হারাতে দিতে চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্যালারির পাশাপাশি আমরা এগুলো ওয়েবসাইটেও সংরক্ষণ করেছি। যেন পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখা যায়।’

হৃদয় চন্দ্র তরুয়া চবির ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তরুয়া ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ২৩ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

 

আরেক শহিদ ফরহাদ হোসেন ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিজ এলাকা মাগুরায় ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে গিয়ে শহীদ হন তিনি। পরিবারে চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন ফরহাদ।